গোপাল ভাঁড়ের গল্প । Gopal Bhar Stories in Bengali

গোপাল ভাঁড়ের গল্প। Gopal Bhar Stories in Bengali

গোপাল ভাঁড়ের গল্প : মজার ছোট গল্প পড়তে কার না ভালো লাগে ! আর বাংলায় মজার গল্পের কথা মাথায় এলেই সবার আগে মনে পরে যায় গোপাল ভাঁড়ের কথা। এই গোপাল ভাঁড় বাঙালিদের মধ্যে এক মজাদার কৌতুক চরিত্র। ছোট্ট বেলা থেকেই আমরা অনেক রকম গল্প শুনে এসেছি। এদের মধ্যে বেশিরভাগ গল্পই ছিল হয় গোপাল ভাঁড়ের নাহয় ঠাকুরমার ঝুলির। আজ আমরা এই পোস্টে সেই গোপাল ভাঁড়ের কিছু মজার মজার গল্প শেয়ার করবো। এই গোপাল ভাঁড়ের মজাদার গল্প ( Gopal Bhar Stories in Bengali ) তোমাদের কেমন লাগলো অবশ্যই কমেন্টে জানাবে। ভালো লাগলে আমরা আরও এরকম অনেক মজাদার বাংলা গল্প পোস্ট করার চেষ্টা করবো ।

Also Check : বাংলা সাহিত্যের বিভিন্ন চরিত্র ও তার স্রষ্টা তালিকা

গা চাটাচাটির ব্যাপার

মহারাজ কৃষ্ণচন্দ্র অনেকদিন আগে থেকেই ভাবছিলেন কি ভাবে গােপালকে জব্দ করা যায়।
কিন্তু গােপাল যেরকম চালাক, তাকে সহজে কি জব্দ করা যায়।
শেষ পর্যন্ত ভাবতে ভাবতে মহারাজ একটা উপায় খুঁজে বার করলেন।

মহারাজ রাজসভায় বসে আছেন। খুশী মনে তাঁর জোয়ার এসেছে। গােপালকে তার জব্দ করতে হবেই। ভাল উপায় খুঁজে বার করেছেন।

গােপাল তখনও রাজসভায় আসেনি।

ইতিমধ্যে মহারাজ সভাস্থ অন্য সকলেই তাঁর নতন ফন্দির কথা বলেছিলেন। শুনেতাে সবাই অবাক। তাঁদের ধারণা এবার গােপালকে জব্দ করা যাবেই।

গােপাল রাজসভায় আসতেই মহারাজ কৃষ্ণচন্দ্র বললেন, ওহে গােপাল! কাল রাতে আমি একটা স্বপ্ন দেখেছি। তুমি যদি তা জানতে চাও বলি। শুনবে?

বলুন মহারাজ, সে তাে আমার সৌভাগ্য।

স্বপ্নে কি দেখেছি জানাে, তুমি আর আমি—দুজনেই চলেছি এক নতন দেশে। অচেনা জায়গা। আশেপাশে কেউ নেই। দু’পাশে দুটো বড় দীঘি। মাঝখানে সরুপথ! দুটো দীঘি—একটা ক্ষীরের আর একটা গুয়ের। তুমি আর আমি চলেহিচলেছি সেই পথ ধরে।

তুমি পা হড়কে গয়ের দীঘিতে ডুব দিলে—আর আমি পা হড়কে ক্ষীরের দীঘিতে ডুব দিলাম। তারপরেই আমার ঘুম ভেঙে গেল।

মহারাজ কৃষ্ণচন্ত্রের মুখে স্বপ্নের বিবরণ শুনে সবাই একসঙ্গে হেসে উঠল।

রাজসভার পণ্ডিত আবার ঠাট্টা করে গােপালকে বললেন, দেখতাে গােপাল, তােমার গায়ে গা লেগে আছে কিনা ?

গোপাল এবার বলল, মহারাজ, কি আশ্চর্য স্বপ্ন! আমি একই স্বপ্ন দেখেছি—অর্থাৎ আপনি ক্ষীরের, আর আমি গয়ের দীঘিতে পড়ে যাই।

মহারাজ প্রসন্ন হয়ে বললেন, তাহলে তুমি একই স্বপ্ন দেখেছে। স্বীকার করছ তাে ?

হ্যাঁ—তবে আপনার স্বপ্ন ঐখানে ভেঙে গেলেও আমার খানিক পরে ঘুম ভেঙ্গেছে-তারপরে আমি আরও কিছু, কিন্তু দেখেছি। যদি অনুমতি দেন বাদবাকি স্বপ্নের কথা প্রকাশ করি।

বল। আমি সানন্দে অনুমতি দিলাম।

তবে শুনুন। আপনি ক্ষীরের দীঘি থেকে উঠলেন। আমি সেই গুয়ের দীঘি থেকে কোন রকমে উঠলাম। তারপর দেখি জায়গাটা ভীষণ অন্ধকার। আমাদের দু’জনের গায়ে আঠালাে পদার্থ লেগে আছে।

আপনি বললেন, গােপাল এসাে আমরা পরস্পর গা চাটি ।

তারপর আপনি আমার গা চাটতে লাগলেন আর আমিও আপনার গা চাটতে লাগলাম। হাঁ সবটাই গা চাটাচাটির ব্যাপার।

শেষ পর্যন্ত মহারাজ কৃষ্ণচন্দ্র গােপালের কাছে ভীষণ জব্দ হলেন। গােপালের তীক্ষ্ণ বুদ্ধির কাছে মহারাজ পরাজিত হলেন আর মনে মনে ভাবলেন, গােপালের বুদ্ধি অসাধারণ।

গোপালের রাজবাড়িতে যাওয়া নিষেধ

কোন এক কারণে মহারাজ কৃষ্ণচন্দ্র গােপালের উপর ভীষণ রাগ করেছিলেন এবং রাজবাড়িতে দেউড়ীর দারােয়ানকে আর সকলকেই গােপালকে রাজবাড়িতে ঢুকতে দিতে নিষেধ করে দিয়েছিলেন।

গােপাল দু-চারবার রাজবাড়িতে গিয়ে মহারাজ কৃষ্ণচন্দ্রের সঙ্গে দেখা করতে গিয়ে ফিরে এসেছিল।
কি করবেন ভেবে ঠিক করতে পারলেন না।

গােপাল তার আগের দিন রাতে শােবার সময় তাঁর স্ত্রীকে বললেন খুব ভােরেই তাকে জাগিয়ে দিতে।

মহারাজের সঙ্গে দেখা করার একমাত্র সহজ উপায় মহারাজ যখন প্রাতঃভ্রমণে নদীতীরে যাবেন তখন তাঁর সঙ্গে গিয়ে দেখা করা।

কিন্তু গােপালের বাড়ি থেকে নদীতীর অনেকটাদূরে , সুতরাং ভােরে না বেরুলে মহারাজের সঙ্গে দেখা করা মুশকিল।

তাই আগের দিন রাতে শুতে যাবার আগে স্ত্রীকে বলে রেখেছিল —তাকে খুব ভােরে জাগিয়ে দিতে।

গােপাল ভাঁড়ের একমাত্র ভরসাই তো মহারাজ কৃষ্ণচন্দ্র। ভুল বােঝাবুঝির জন্য তিনি গােপালের উপর ভীষণ চটে গেছেন। চিন্তায় ভাবনায় গােপালের কিছুতেই ঘুম আসছিল না। মাঝ-রাতে তার ঘুম ভেঙ্গে গেল। সে বললে, দেখ তাে পূর্বদিকের আকাশ লাল হয়েছে কিনা।

গােপালের স্ত্রী ঘুমভরা চোখে দরজা খুলে বাইরে বেরিয়ে এল। বাইরে তখন ঘন কালাে অন্ধকার।

গােপালের স্ত্রী বাইরে থেকে বললে, অন্ধকারে কিছুই দেখতে পাচ্ছিনা যে।

ঘরের ভিতর থেকে গােপাল রাগ ও বিরক্তি সহকারে বললে, তুমি চোখের মাথা খেয়েছাে ? এমনিতে না পাও•••আলাে জ্বেলে দেখনা!

আর খাওয়াই হলােনা

গােপালের যখন পনের বৎসর বয়স তখন তার অভাবের শেষ নেই। মহারাজের সঙ্গেও তার কোন বােগাযােগ ছিল না। ছেলে-বেলায় বাবাকে হারাবার পর অভাবের শেষ ছিল না।

দু’বেলা পেটপুরে গােপালের খাওয়া জুটত না।

গােপালের প্রতিবেশী অতু গোঁসাইয়ের শিষ্য অনেক। তাঁর কোন অভাব ছিল না। ভালাে ভালাে খাওয়া জুটতাে আর উপায়ও হতাে।

অতু গোঁসাই একদিন গােপালকে ডেকে বলেন, ঐভাবে না খেয়ে মরবি কেন ? আমার সঙ্গে শিষ্যবাড়ি চল—আমার তল্পিতল্পা বইবি।

গোপালের সংসারের অবস্থা তখন খুবই খারাপ—তাই গােপাল অতু গোঁসাইয়ের প্রস্তাবে রাজী হয়ে গেল।

অতু গোঁসাই শিষ্যবাড়ি গিয়ে স্বপাকে খেতে দিতে বললেন।

শিষ্যরাই চাল ডাল তরিতরকারী জুটিয়ে দিত। অতু গোঁসাই রােজই রান্নাবান্না করে দু’পাতে দুজনের জন্য ভাত ও ব্যঞ্জনাদি আলাদা করে রেখে স্নান করতে যেতেন। তারপর দুজনে একসঙ্গেই খেতে বসতেন।

গােপাল রােজই অতু গোঁসাইয়ের পাতের দিকে চেয়ে থাকতাে—দেখতাে ওখানে মিষ্টির পাহাড়, আর গোপালের পাতে সামান্য দুটো বোঁদে—কোনদিন আবার তাও থাকত না। গােপাল যেন তাঁর কেনা গােলাম।

গােপাল একদিন আর সহ্য করতে পারল না। অতু গোঁসাইয়ের পাতের দিকে তাকিয়ে দেখে, সেখানে বেশ বড় আকারের—দুটো ক্ষীরমােহন আর এক বাটি পায়েস সামান্য কিছু, দইও হিল । আর
গােপালের পাতে মাত্র একটা দানাদার।

অতু গোঁসাই সবে স্নান সেরে খেতে বসবেন, গােপাল অতু গোঁসাইয়ের পাত আর নিজের পাত ছুয়ে দিয়ে বললে, গোঁসাই এ পাতে বসব, না ও পাতে বসব।

“কি সর্বনাশ’ অতু গোঁসাই চীৎকার করে বললে, তুই যে নাপিত, আমার পাত ছয়ে দিলি—আজ যে আমার খাওয়াই হবে না।

হাসির ফোয়ারা যে

গােপাল এক মহাজনের কাছে অনেক টাকা ধার নিয়েছিল। ‘আজ দেব, কাল দেব বলে’ গােপালের পক্ষে সে টাকা আর ফেরত দেওয়া সম্ভব হয়নি।

সেই মহাজন গােপালকে একদিন বাজারের মধ্যে পাকড়াও করে বললে, আমার টাকাগুলাে দিয়ে দাও তাে হে, নইলে আজ আর তােমায় ছাড়বনা।

গােপাল বললে, টাকা কি দেবনা বলেছি। আপনার টাকা কালই পাবেন। দয়া করে আমার বাড়িতে চলে
আসন। আগামীকাল আপনার টাকা শােধ না করতে পারলে আমি আর জল স্পর্শ করব না।

গােপালের কথা শুনে মহাজন নির্লিপ্ত হয়ে বললে, বেশ ভাল কথা, এখন এত লােকের সামনে কথা দিলে।

পরের দিন ভােরেই মহাজন গােপালের বাড়িতে গিয়ে হাজির।

এসেই বললে, কই হে গােপাল, আমার টাকা দাও।

মহাজনের ডাক শুনে গােপাল বাড়ির বাইরে বেরিয়ে এসে একগাল হেসে বললে, দয়া করে বাড়ির দাওয়ায় একটু বিশ্রাম করন, আমি এক্ষণি আপনার টাকা পরিশােধের ব্যবস্থা করছি।

মহাজন নিশ্চিন্ত হয়ে টাকা পাবার আশায় গােপালের বাড়ির দাওয়ায় বসে রইল।

খানিক পরে গােপাল আর গােপালের ছেলে বাড়ির সামনের মাঠে তিন হাত অন্তর অন্তর আঁটি পুঁততে লাগল।

তা দেখে মহাজন গােপালকে জিজ্ঞেস করলো, এ কি করছ গােপাল ? আমার যে বেলা হয়ে যাচ্ছে। কাজকর্ম আছে তাে?

দেখছেন তাে আঁটিপুঁতেছি! একট, বসুন না। আপনার টাকার ব্যবস্থা করে তবে জলস্পর্শ করব।

এবার মহাজন রেগে গিয়ে বললে, সেই থেকে তাে বসিয়ে রেখেছে, তুমি আমার টাকার কি ব্যবস্থা করলে ?

মহাজনের কথা শুনে গােপাল একগাল হেসে বলল, এতক্ষণ ধরে তাে আপনার টাকা শােধের ব্যবস্থা করলাম মশায়।

মহাজন তো অবাক।

তার মানে? তুমি তাে আমের আঁটি পুতলে। এতে আমার টাকা শোধের কি ব্যবস্থা হলাে, তা তাে বুঝতে পারলাম না।

—এই যে আমের আঁটিগুলাে পতলম, তাতে আমগাছ হবে এবং অতগুলাে আমগাছে যা ফল হবে, তা তাে আর কম নয়। দু’বছরে আমের টাকায় আপনার সব দেনা পরিশােধ হয়ে যাবে। আপনাকে যখন কথা দিয়েছি আজই টাকা শােধের ব্যবস্থা করব, তাই ব্যবস্থা করে দিলাম। দু’বছরের জন্য আমের ইজারা আপনাকে দিয়ে
দিলাম। আর ভাবছেন কেন, ধরুন আপনার টাকা বলতে গেলে পেয়েই গেলেন।

গােপালের কথা শুনে মহাজন হােঃ হােঃ করে হেসে উঠল।

আর গােপাল বললে, এ টাকাটা নগদ পেয়ে গেলেন বলে হাসি আর ধরে না। এ যে একেবারে হাসির ফোয়ারা!

মাছ তো নয় – যেন অমৃত

গােপালের কাছে এসে মাঝে মাঝে একজন গুলবাজ নােক নানান ধরণের গালগল্প করত।

লােকটি রাজা কৃষ্ণচন্দ্রের আত্মীয় বলে গােপাল প্রথম প্রথম তার গালগল্পের প্রতিবাদ করত না।

কিন্তু গােপাল আর সহ্য করতে পারল না, একদিন তার প্রতিফল দিয়েছিল।

ভদ্রলােক গােপালকে বললে, জানাে গােপাল আমার মামার যা একখানা পেল্লায় লােহার কড়াই ছিল তা বলতে গেলে একটা পুকুরের মত। পুকুরই বা বলছি কেন আকারে দীঘির মতাে হবে। রান্না ঘরে সে কড়া রাখা সম্ভব নয় বলে আমার মামার সে কড়াটাকে একটা মাঠের মাঝখানে রেখে দিত। বর্ষাকালে সে কড়াইতে এত
বৃষ্টি হত যে-যে জল জমত লােকজনেরা সে কড়াইতে স্নান করত, সাঁতার কাটত।

গােপাল গুলবাজ ভদ্রলােকের কথা শুনে সেদিন আর চুপ করে থাকতে পারল না, সে বললে, জানেন, আমার বড় মামা বর্শা দিয়ে এতবড় একটা রুই মাছ ধরেছিলেন, যে সেই রুই মাছের মাথাটা প্রায় লম্বায় ৬০ হাত। আর পুরাে মাছটা লম্বায় কত বড় তা মাপাই সম্ভব হয়নি। আমি সেই রুই মাছ ভাজা খেয়েছি, আহা কি চমৎকার তার স্বাদ।

—কী যে বলাে, অতাে বড় রুই মাছ হতে পারে না, তা ছাড়া অতাে বড় রুই মাছ ভাজতে বড় বড় কড়াই লাগে তা তােমার জানা আছে।

গােপাল এক গাল হেসে বললে, আমার তা জানা আছে বৈকি।

আপনার মামার বাড়ি থেকে সেই কড়াইখানা আমার মামারা সে বার নিয়ে এসেছিল এবং সে কড়াইতে মাছটা ভাজা হয়েছিল।

গােপালেরও কাছ থেকে উপযুক্ত জবাব পেয়ে সেই গুলবাজ ভদ্রলােক একেবারে চুপসে গেল।

গােপাল আবার বলে, আহা, মাছ তাে নয় যেনঅমৃত।

গােপালের রাজবৈদ্য নির্বাচন


মহারাজ কৃষ্ণচন্দ্র কোন এক দাতব্য চিকিৎসালয়ের জন্যে বৈদ্য নির্বাচনের ভার, গােপালের উপর দিয়ে বললেন, কি হে গােপাল, উপযুক্ত একজন বৈদ্য নির্বাচন করতে পারবে তাে?

—আমার উপর আস্থা রাখুন, নির্বাচন ভুল হবে না।

দলে দলে বৈদ্যরা গােপালের সঙ্গে দেখা করতে এল।

গােপাল তাদের সকলকে বললে, রাজা আমার উপর নির্ভর করে নির্বাচনের ভার দিয়েছেন সত্য, কিন্তু উপযুক্ত রাজবৈদ্য পাওয়া অত সহজ নয়। কম করে হাজার রােগী না মারলে রাজবৈদ্য হওয়া
যায় না।

অতএব, আপনারা এখন কে কত রােগী ভুল চিকিৎসা করে মেরেছেন আমাকে তা নির্ভয়ে বলতে পারেন।

গােপালের কথা শুনে একজন বৈদ্য বিশেষ উৎসাহিত হয়ে বললেন, আমি আজ পর্যন্ত আট হাজার রােগী দেখেছি তার মধ্যে তিন হাজার রােগীই ভুল চিকিৎসার জন্য মারা গেছে। তাই রাজবৈদ্য হিসাবে নিবাচিত হবার জন্য নিজেকে উপযুক্ত মনে করি।

আর – একজন বৈদ্য বললেন, ভুল চিকিৎসা করে আমি আরও বেশী রােগী মেরেছি। আমি এ পর্যন্ত ছ’হাজার রােগীর চিকিৎসা করেছি তার মধ্যে চার হাজার রােগীই ভুল চিকিৎসায় মারা গিয়েছে।

একজন তরুণ বৈদ্য উৎসাহিত হয়ে বললে, আমিই রাজবৈদ্য পদপ্রার্থীর মধ্যে সবাপেক্ষা উপযুক্ত, কারণ এ পর্যন্ত আমি দশজন রােগীর চিকিৎসা করেছি তার মধ্যে দশজনই ভুল চিকিৎসায় মারা গিয়েছে।

এই সময় একজন বৃদ্ধ বৈদ্য কোন কথা না বলেই চুপিচুপি স্থানত্যাগ করে চলে যাচ্ছিলেন, গােপাল পরে সমাদরে ডেকে বললে, আপনি কোন কিছু না বলেই চলে যাচ্ছেন ?

বৃদ্ধ কবিরাজ হতাশার সুরে বললেন, আমার পক্ষে রাজবৈদ্য হবার কোন সম্ভাবনা নেই। আমি আজ পর্যন্ত বারাে হাজার রাগীর চিকিৎসা করেছি কিন্তু তার মধ্যে আড়াইশাে রােগীকেও মারতে পারিনি।

সেই বৃদ্ধ কবিরাজের কথা শুনে গােপাল কৃষ্ণচন্দ্রের কানে কানে বললেন, মহারাজ, ইনিই রাজবৈদ্য হওয়ার একমাত্র উপযুক্ত ব্যক্তি।

গােপাল এই রকম অভিনব পদ্ধতিতে রাজবৈদ্য নির্বাচন করায় মহারাজ কৃষ্ণচন্দ্র খুশী হলেন। আর মনে মনে ভাবলেন, গােপালের উপর নির্বাচনের ভার দিয়ে তিনি ঠিকই করেছেন।

তারই মতো সেয়ানা

গােপালের এক ভাইপাে ছিল। তার নাম,গাবু । গােপালের মতই সেয়ানা।

মহারাজ কৃষ্ণচন্দ্রের দয়ায় গােপাল পাকা বাড়ি তুলেছিল, কিন্তু তার ভাইপাের পক্ষে তখনও পাকা বাড়ী তোলা সম্ভব হয়নি। কুঁড়েঘরেই সে বাস করত।

গােপাল একদিন ছাদে দাঁড়িয়ে মনের সুখে গড়গড়া টানতে টানতে তার ভাইপােকে ডাক দিয়ে বললে, ওরে গাবু, এই অসময়ে বাড়ির ভেতর বসে কি করছিস রে ?

গােপালের ভাইপাে বাড়ির ভিতরেই ছিল। গােপালের ডাক শুনতে পেয়েও সেদিন সে বাড়ির বাইরে বেরােয়নি বা গােপালের ডাকে সাড়া দেয়নি। কারণ সে বুঝতে পেরেছিল যে, তার কাকা তাকে সহসা ডাকেনা, নতুন পাকা বাড়ির প্রতি দৃষ্টি আকর্ষণ করার জন্য এমন ডাকাডাকি করছে।

এই ঘটনার প্রায় দেড় বছর পরে গােপালের ভাইপােও নিজে চেষ্টায় পাকা বাড়ি তৈরী হল। তার নতুন পাকা বাড়ির ছাদে দাঁড়িয়ে সে গােপালকে ডেকে বললে, ও গোপাল কাকা, দেড় বছর আগে ছাদে দাঁড়িয়ে কি যেন বলছিলে ?

গােপাল সেদিন বুঝতে পারল যে, তার ভাইপােটি বোকা নয়- তার মতই সেয়ানা।

নইলে দেড় বছর পরে কেউ আবার সাড়া দেয় ?

ছুটে ঘরে ঢুকে গেল

নিজের বাড়ির একটা ঘর ছাইবার জন্য গােপাল একজন ঘরামী ঠিক করেছিল। গােপালের পুত্রবধু উঠোনে বসে বাসন মাজছিল।

যুবক ঘরামীটাও ঘর ছাইতে ছাইতে বারবার গােপালের সুন্দরী পুত্রবধুর দিকে হা করে তাকাচ্ছিল।

এই অবস্থায় গোপাল না পারে পুত্রবধুকে কিছু বলতে, না পারে ঘরামীকে।

শেষ পর্যন্ত গােপাল সেই ঘরামীকে বলতে বাধ্য হলাে, বললে, বুঝলে হে ছােকরা, নিজের কাজ করে যাও। বেল পাকলে কাকের কি?

গােপালের কথা শুনে যুবক ঘরামীটি ভীষণ লজ্জা পেল, তার পর সে গােপালের পুত্রবধুর দিকে হাঁ করে না তাকিয়ে কাজে মন দিল।

গােপালের পুত্রবধুও লজ্জা পেয়ে এক ছুটে ঘরে ঢুকে গেল।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *